বঙ্গোপসাগরে মৎস্য শিকার নিষিদ্ধের তোয়াক্কা না করেই চলছে রমরমা মাছ শিকার
-
আপডেট সময় :
রবিবার, ১৩ জুন, ২০২১
-
৩২৪
০ বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সরকার ঘোষিত আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বঙ্গোপসাগরে চলছে রমরমা মৎস্য শিকার। প্রশাসনের বিরুদ্ধে রয়েছে অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ জেলেদের।
বঙ্গোপসাগরে উপকূলে ২১ই মে থেকে ৬৫ দিনের (অবরোধ) সমুদ্রে মৎস্য শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। এ সময়টায় অধিকাংশ মাছ ডিম ছাড়ে। এ কারণেই সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

সামুদ্রিক মৎস্য আইন ২০২০ (ধারা-৫১) বলা হয়েছে, অনধিক দুই বছর বা অনধিক দশ লক্ষ টাকা, তবে এক তৃতীয়াংশের কমে নয় বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে।
গত ৯ই জুন (বুধবার) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পটুয়াখালীর বঙ্গোপসাগরে উপকূলের রামনাবাদ চ্যানেল থেকে আন্ধারমানিক নদীর মোহনা পর্যন্ত, ‘সামুদ্রিক মৎস্য আইন’২০২০ অমান্য করে প্রায় শতাধিক খুঁটা জেলেরা এবং ট্রলার ও ফাইভার-বোট ব্যাবহার করে সমুদ্রে রমরমা মাছ শিকারে ব্যস্ত রয়েছে অনেক জেলেরা। বঙ্গোপসাগরে চলমান এই মাছ শিকার বর্তমানে অব্যাহত রয়েছে।

অবরোধ চলাকালীন মৎস্য শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকার পরেও বঙ্গোপসাগরে জেলেরা অবাধে করছে মাছ শিকার; মৎস্য বন্দর কুয়াকাটা, আলিপুর ও মহিপুরে দেখা গেছে, মৎস্য ব্যবসায়ীরা করছে মাছ প্রক্রিয়াকরণ (ক্রয়-বিক্রয়), পরিবহন শ্রমিকরা করছে মাছ আহরন, বরফকলগুলো চলছে প্রতিনিয়ত।

ইউসুফ মাঝি (৫২) বলেন, প্রশাসনের কর্মচারীদের নৌকা প্রতি (গঙ্গামতি জেলেদের থেকে দশ হাজার ও ঝাউবাগান জেলেদের থেকে পাঁচ হাজার করে টাকা যারা দিতে পেরেছে তারাই বর্তমানে সাগরে মাছ ধরছে।
মোঃ ইয়াসিন (৪০) বলেন, আমরা টাহা দিতে পারিনাই তাই মাছ ধরতে পারছি না; সরকার কি তাইলে টাকাওয়ালা ও প্রভাবশালীদের জন্য সাগর উন্মুক্ত করেছে!

শুধু গরীবের জন্য কি আইন জারি করা অইছে নাকি আইন সবাইর জন্য সমান?
ইউসুফ হাং (২৫) বলেন, অনেক প্রভাবশালীরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাছ সাগরে শিকার করছে; প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নেয় না? তারা কি এইসব দেখে না।
আরো বেশ কয়েকজন জেলেদের এমনটাই অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলে মালিক বলেন, মোর অধীনে ৮-৯টি বোট সাগরে মাছ ধরছে।
পাশাপাশি গঙ্গামতি থেকে মাছধরা ১৮টি ট্রলার, ৩০টি নৌকা এবং ৮-৯টি ফাইভার বোট সমুদ্রে মাছ শিকার করছে।
প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে জেলেরা কিভাবে মাছ শিকার করছে এমন প্রশ্নের জবাবে কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ভারী নৌযান না থাকার কারনে ঠিকভাবে অভিযান পরিচালনা করতে পারছে না। কোস্ট গার্ড, নৌ-পুলিশ এবং মৎস্য অধিদপ্তরের একটি দল মৎস্য শিকার নিষিদ্ধ চলাকালীন সময়ে বঙ্গোপসাগর ও উপকূলে অভিযানে অব্যাহত রয়েছে।
কুয়াকাটা নৌ-পুলিশের এসআই মাহমুদ হাসান বলেন, বঙ্গোপসাগরে আবহাওয়া খারাপ; একটি সরকারি স্পিড বোট সেটি অকেজো রয়েছে, যার ফলে ঠিকভাবে অভিযান পরিচালনা করতে পারছে না।
জেলেদের অভিযোগ রয়েছে, অবৈধভাবে টাকা লেনদেনের মাধ্যমে সমুদ্রে মাছ শিকার করছে অনেক জেলেরাঃ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেকোনো বিষয়ে সামাজিক রীতিতে প্রশাসনিক দায়ভার একটি প্রবহমান সমালোচনা হয়ে দাড়িয়েছে, এরকমটা একটি মহল বলে থাকে, তবে এর সত্যতা নেই কোনো।
এই বিষয়ে কুয়াকাটা ‘আশার আলো মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি’র সভাপতি নিজাম শেখ বলেন, কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে দেখা যায় শতাধিক নৌকা মাছ শিকার করছে অবাধে, প্রশাসনের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।
প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ফিশিং বোট এবং নৌকার জেলেদের মাছ শিকারের সুযোগ করে দিয়েছে।
Like this:
Like Loading...
নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
Leave a Reply