বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তাই ছিল ইন্দিরার অগ্রাধিকার: শশাঙ্ক ব্যানার্জি
-
আপডেট সময় :
বৃহস্পতিবার, ১৮ মার্চ, ২০২১
-
৩২৩
০ বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক //
১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পণের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিরাপত্তা। কীভাবে তাকে পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করা যায়। এর জন্য যে কোনো মূল্য দিতে রাজি ছিলেন তিনি। সে কথা ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন তৎকালীন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল উইং)-এর প্রধান রামনাথ রাওকে।
পাকিস্তানের মিলিটারি আদালতে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে। নৃশংসভাবে হত্যা করার পরিকল্পনাও করা হয়েছিল তাকে। সেটাই ছিল ইন্দিরার সবচেয়ে বড় উদ্বেগ। হৃদয় দিয়ে বাংলাদেশকে সমর্থন করেছিল ভারত। তাই শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হলে, ভারতের স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে-এটাই ছিল ভয়। বাংলাদেশকে ‘অনাথ’ দেখতে চাননি তিনি।
তৎকালীন ভারতীয় কূটনীতিক শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি দেশটির গণমাধ্যমে দ্য ওয়ারে লেখা ইতিহাসের বিশ্লেষণধর্মী এক কলামে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
তিনি লিখেছেন, পাকবাহিনী ঢাকায় ভারতীয় সেনা ও বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে। ভারত আর বাংলাদেশের জন্য এটি এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। কিন্তু সেসময় ইন্দিরা গান্ধী তথা ভারত অন্য এক বিপদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। একদিকে যুদ্ধের বিপুল খরচ, তার উপরে পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) থেকে আসা প্রায় এক কোটি শরণার্থী, যারা পাকসেনার অত্যাচারে সীমান্ত পার করে চলে এসেছিল তাদের খরচ। তার মধ্যে বাড়তি খরচ এই ৯৩ হাজার পাকসেনা।
এদিকে পরাজয়ের অপমান সহ্য করতে না-পেরে পদত্যাগ করেন তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান। আমেরিকায় থাকা জুলফিকার আলি ভুট্টোকে ফোন করে সে কথা জানান। দায়িত্ব দিয়ে যান ভুট্টোকেই। তড়িঘড়ি করে রাওয়ালপিন্ডির বিমান ধরেন তিনি। ভুট্টোর ফেরার খবর পেয়েই জরুরি সভা ডাকেন ইন্দিরা গান্ধী।
ভুট্টোর বিমান রিফুয়েলিং-এর জন্য থামার কথা ছিল হিথরো বিমানবন্দরে। ইন্দিরা গান্ধী চেয়েছিলেন, সেসময় সেখানে উপস্থিত থাকুক কোনো ভারতীয় প্রতিনিধি। যাতে তিনি জানতে পারেন, শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কী ভাবছেন তিনি। ইন্দিরার সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভারতের তৎকালীন বিদেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা দুর্গা প্রসাদ ধর, ‘র’-প্রধান রামনাথ কাও, মুখ্য সচিব পিএন হাসকার, বিদেশ সচিব টিএন কাউল।
পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশের) মুখ্য সচিব ছিলেন মুজাফ্ফর হোসেন। তিনি ভারতে যুদ্ধবন্দি হন এবং ডিপি ধরের বাড়িতে অতিথির মর্যাদায় ছিলেন। তার স্ত্রী লায়লা ছিলেন লন্ডনে। ফলে সেসময় কূটনীতিকদের মাধ্যমেই যোগাযোগ করতেন স্বামী-স্ত্রী। অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক শশাঙ্ক ব্যানার্জি জানিয়েছেন, তিনিই দুজনের মাধ্যম হয়ে উঠেছিলেন। ফলে দুজনের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। লায়লা ছিলেন ভুট্টোর একসময়ের বান্ধবী। সেই লায়লাকেই কাজে লাগান ইন্দিরা। ভুট্টোর সঙ্গে কথা বলতে পাঠান লায়লাকে। উদ্দেশ্য ছিল একটাই। শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কী ভাবছেন সেটা জানা।
শশাঙ্ক ব্যানার্জি লায়লাকে জানান, তিনি যাতে হিথরো বিমানবন্দরে গিয়ে একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ভুট্টোকে বলেন, তার স্বামীকে ভারত থেকে ছাড়ার ব্যবস্থা করতে। সেইমতো বিমানবন্দরের লাউঞ্জে দেখা হয় দুজনের। কথাবার্তা শেষে লায়লাকে কাছে টেনে তার কানে কানে একটা বার্তা দেন ভুট্টো। তিনি বলেন, ‘লায়লা আমি জানি, তুমি কী জানতে এসেছো। একটা মেসেজ দিয়ো ইন্দিরা গান্ধীকে। তাকে বলো, আমি শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেব। কিন্তু বদলে কী চাইব? সেটা পরে জানাব।’ পরে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির বদলে চাওয়া হলো ৯৩ হাজার যুদ্ধবন্দির মুক্তি। ১৯৭২-এর ৮ জানুয়ারি ছেড়ে দেওয়া হলো মুজিবুর রহমানকে। ফিরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন তিনি। এর ঠিক আট মাস পর ছেড়ে দেওয়া হয় ওইসব পাক যুদ্ধবন্দিদের
Like this:
Like Loading...
নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
Leave a Reply