নাসিকে নির্বাচনী হাওয়া, করোনাকালীন সময়কে গুরুত্ব দিচ্ছে ভোটাররা
-
আপডেট সময় :
মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২২
-
২৩৪
০ বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক //
নাসিক নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে প্রচারণার পাশাপাশি উত্তাপ ছড়িয়েছে সর্বত্র। ১০ জানুয়ারি প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমানের সাংবাদিক সম্মেলনের পর নির্বাচনী ভোটের মাঠের চিত্র অনেকটা উল্টো দিকে প্রভাহিত হচ্ছে।
শৈত্যপ্রবাহ জেঁকে না বসলেও নারায়ণগঞ্জে জোরেশোরে বইতে শুরু করেছে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী হাওয়া। আগামী ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ভোট যুদ্ধ।
দেশের সপ্তম সিটি করপোরেশন হিসেবে গঠিত, নারায়ণগঞ্জ শহর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও শীতলক্ষ্যার ওপাড়ে বন্দর এলাকার মোট ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ সিটি করপোরেশন।
তবে সাধারণ ভোটাররা বলছেন, এবার তারা ভোট দেবেন করোনাকালে সম্পৃক্ততা ও ভূমিকার বিষয়টি মাথায় রেখে।
তারা বলছেন, প্রায় দেড় বছর করোনার লকডাউনে সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে যারা গিয়েছেন তাদের ভোট দিয়ে সেই আন্তরিকতার পুরস্কার দিতে চাই আমরা।
সরেজমিনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকার সিদ্ধিরগঞ্জ, শহর ও বন্দর এলাকায় ঘুরে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নাসিক নির্বাচনে বেশ ভেবেচিন্তেই ভোট দিবেন তারা। বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের আমলনামা এখন ভোটারদের মাথায়। তবে বিশেষ করে করোনাকাল তথা লকডাউন পরিস্থিতি এ ভোটের সমীকরণে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাধারণ ভোটাররা বলছেন, বর্তমান কাউন্সিলরদের মধ্যে অনেকেই ৩য় বারের মতো নিজেদের ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ করছেন। ভোটারদের বিচারে এদের মধ্যে অনেকেই আছেন ‘অপ্রতিদ্বন্দ্বী’, কেউ আছেন ‘ফিফটি ফিফটি’ আবার কেউ ‘দোদুল্যমান’ অবস্থায়। বেশ কিছু ওয়ার্ডে নতুন মুখের আবির্ভাব ঘটাতে চাচ্ছেন ভোটাররা।
তবে গত লকডাউন পরিস্থিতি বিবেচনায় সাধারণ ভোটারদের মাঝে বেশ কয়েকজন বর্তমান কাউন্সিলরের অবস্থান আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্ত বলে জানা গেছে।
শহর এলাকার ভোটাররা বলছেন, করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লাশ দাফনে এগিয়ে এসেছিলেন কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার। তার অনুপ্রেরণা ও কাজের প্রশংসা শুধু তার নিজের ওয়ার্ডই না, পুরো সিটি করপোরেশন এলাকা ছাপিয়ে দেশব্যাপী আলোড়িত। তাকে ভোট না দিলে মানবিকতার সঙ্গে প্রতারণা করার শামিল হবে।
পাশাপাশি ভোটাররা বলছেন, লাশ দাফনের পাশাপাশি ত্রাণ কাজে ব্যাপকভাবে নিজ এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ১২নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু। এলাকায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা এই কাউন্সিলর সাবেক
পৌরসভা থেকে এযাবত জয়ে হ্যাটট্রিক করেছেন ইতোমধ্যেই।
অপরদিকে শহরের ১৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা অভিজিত সরকার, মনোরঞ্জন দাস, ১৩নং ওয়ার্ডের ভোটার শীতল চন্দ্র, সুমন হোসেন, ১৫নং ওয়ার্ডের ভোটার অসিত সাহা, লিটন পালসহ বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে ত্রাণ দিয়েছেন আমাদের এলাকার সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর শারমিন হাবিব বিন্নি। এক পর্যায়ে তার পুরো পরিবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং সুস্থ হয়েও তিনি ঘরে ঘরে গিয়েছেন। একজন নারী কাউন্সিলরের জন্য বিষয়টি ছিল অনুপ্রেরণার। তার ওয়ার্ডে বিকল্প কোনো প্রার্থীর নাম নিতে চান না অধিকাংশ ভোটাররা।
নগরীর দক্ষিণাংশের ভোটাররা বলছেন, ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু শুধু সরকারি ত্রাণই নয়, নিজ অর্থায়নে ত্রাণ দিয়েছেন, নিজ পুকুরের মাছ বিলিয়েছেন ঘরে ঘরে। এমন জনপ্রতিনিধিকেই আমরা আবার চাই। নির্বাচন না করার ঘোষণা দেয়ার পরেও এলাকার সাধারণ মানুষের অনুরোধে আবারো প্রার্থী হয়েছেন ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল। তার বিপরীতে পদপ্রত্যাশীদের অবস্থান তেমন শক্ত নয় বলে জানিয়েছেন ভোটাররা।
এদিকে বন্দর এলাকার ভোটাররা বর্তমান কাউন্সিলরদের মধ্যে অনেকের প্রতিই চাপা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, বন্দর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে পুরুষ ও নারী মিলিয়ে ১২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে অনেকের কাছেই করোনাকালে বিমুখ হয়েছি আমরা। কোনো কোনো এলাকায় কাউন্সিলর পদপ্রত্যাশীরা বর্তমান কাউন্সিলরের চেয়ে বেশি কাজ করেছেন, সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছতে পেরেছেন।
তবে সাধারণ ভোটারদের মাঝে যাদের নিয়ে আলোচনা চলছে তাদের মধ্যে ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফজাল হোসেন, ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর দুলাল প্রধান, ২২নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী খান মাসুদ উল্লেখযোগ্য।
সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাতেও অনেকটা একই রকম পরিস্থিতি বিরাজমান। তবে সম্প্রতি ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলা হোসেন মৃত্যুবরণ করায় এ ওয়ার্ডে এখনো তেমন কোনো প্রার্থী মাঠে উঠে আসেননি। তবে বর্তমান কাউন্সিলরদের মাঝে ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল, ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি, ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইফতেখারুল আলম খোকন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর (৭, ৮, ৯) আয়েশা আক্তার দীনা, ৮নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী মহসীন ভূঁইয়া বেশ আলোচনায় রয়েছেন ভোটারদের।
এ ব্যাপারে বন্দর প্রেসক্লাবের সভাপতি এড. শাহ্ আলী মোহাম্মদ পিন্টু খান জানান, আমি নিজেও নাসিকের ২২নং ওয়ার্ডের ভোটার। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে সাধারণ ভোটাররা এবার সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেবেন করোনাকালের ভূমিকাকে। কারণ লকডাউন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ বা নিজ নিজ এলাকার ভোটারদের কাছে যাওয়ার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল সেই সুযোগ যারা কাজে লাগিয়েছেন তাদের ব্যাংকেই ভোট জমা পড়বে বলে আমাদের বিশ্বাস।
Like this:
Like Loading...
নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
Leave a Reply