মেহেন্দিগঞ্জ প্রতিনিধি!
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে জামায়াত ইসলামীর এক নেতার বিরুদ্ধে। ধর্ষণের পর ওই ছাত্রী সাড়ে ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ উলানিয়া ইউনিয়নের জাদুয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত জামায়াত নেতার নাম নাছির শেখ (৫৫)। তিনি ওই গ্রামের মৃত কাশেম শেখ এর ছেলে। আর ওই ভুক্তভোগীর নাম সাদিয়া ইসলাম (১৪)। দক্ষিণ গোয়াল ভাওর দাখিল মাদ্রাসার (৯ম) শ্রেণির ছাত্রী এবং একই বাড়ির সালাউদ্দীন ফরাজির মেয়ে। তার বাবা একজন জেলে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জামায়াত নেতা আর ছাত্রী একই বাড়িতে বসবাস করেন। সম্পর্কে তারা দাদা-নাতনি।
সে সুবাদে বিভিন্ন কাজের বাহানায় নাতনিকে ডেকে নিয়ে জোড়পুর্বক ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে ওই ছাত্রী সাড়ে ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এর আগেও এ ধরনের বেশ কয়েকটি অপকর্ম তিনি করেছেন। নাতনিকে ধর্ষণের পরে এ কথা কাউকে না বলতে হুমকিও দেন।
এতে ওই তরুণী সাড়ে ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে বিষয়টি অভিযুক্ত নাছির শেখকে জানালে প্রতিবেশী কয়েকজনকে দিয়ে গর্ভের বাচ্চা নষ্ট করার পরামর্শ দেন। এমনকি মোটা অংকের অর্থ দিয়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আত্নগোপনে চলে যান তিনি।
এই ঘটনায় রোববার (১৩ এপ্রিল) বিকালে ভুক্তভোগী কিশোরীর মা ফাহিমা বেগম বাদী হয়ে নাছির শেখ এর বিরুদ্ধে মেহেন্দিগঞ্জ থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলা সূত্রে জানা যায়, ধর্ষণের শিকার ওই মাদ্রাসা ছাত্রী ৩০ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। ওই ছাত্রী আর অভিযুক্ত নাছির শেখ একই বাড়ির লোক এবং সম্পর্কে দাদা-নাতনি। ছাত্রীকে ভুলিয়ে ভালিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। এর ফলে ওই ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এ ঘটনা ফাঁস না করার জন্য ওই ছাত্রীকে ভয় দেখান অভিযুক্ত। অস্বাভাবিক দেখায় ছাত্রী তার মায়ের কাছে গোমর ফাঁস করে দেন। স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষার পরে জানা যায়, মেয়েটি ৩০ সপ্তাহের অন্ত্বঃসত্ত্বা।
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, আমাকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে এবং প্রকাশ করলে আমার ভাই ও বাবাকে হত্যার হুমকি দেওয়ায় আমি বিষয়টি এতদিন গোপন রেখেছি। সে আমার জীবন নষ্ট করেছে, আমি চাই ওর কঠিন শাস্তি হউক যাতে আর কোন নারীর জীবন নষ্ট করতে না পারে। আমি গর্ভের সন্তান নিয়ে এখন কি করবো।
কিশোরীর মা ফাহিমা বেগম বলেন, আমার বাড়ির একটা অনুষ্ঠানে আমার বোন দাওয়াতে আসছিলো, তখন আমার মেয়ে সাদিয়াকে দেখে বোনের সন্ধেহ হলে আমাকে বলে কিরে আপা তোর মেয়ের অবস্থা এমনকা। তখন আমি বলি আমার মেয়ে এমন না। বোনের কথায় একটি কাঠি এনে টেস্ট করি দেখি দুটি দাগ উঠেছে। এর ফলে সন্ধেহ তীব্র হওয়ায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে জানতে পারি মেয়ে ৩০ সপ্তাহের অন্তঃস্বত্ত্বা। তখন মেয়েকে জিজ্ঞেস করার পর মেয়ে বলে তার চাচাতো দাদার ধর্ষণে সে অন্তঃস্বত্ত্বা হয়েছে। এও বলেন, আমার স্বামী এবং ছেলেকে মেরে ফেলার ভয় দেখানোর কারনে মেয়ে এতদিন চুপ ছিলেন। আমি এখন কি করবো, কোথায় যাবো। আমরা গরিব মানুষ। আমার সর্বনাশ করে দিয়েছে। এক পর্যায় কাঁদতে কাদতে অস্থির হয়ে পড়েন।
কিশোরীর বাবা সালাউদ্দিন ফরাজি বলেন, আমি অভিযুক্তের কঠিন বিচার দাবি করছি, আমার সর্বনাশ করে দিয়েছে। আমার মেয়ে এখন খুবই অসুস্থ।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত নাছির শেখ এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ। তবে নাছির শেখ এর স্ত্রী মেহেরুন বেগম বলেন, এতবছরেও দেখিনি আমার স্বামী কারো দিকে কু-নজরে চাইতে, আমার বদনাম করার জন্য আর আমাকে ফাঁসানো জন্য এই অপবাদ দিচ্ছে। আমার স্বামী এই কাজ করতে পারে না। স্বামী এই কাজ করলে এতদিন কেন প্রকাশ করলো না। আমার স্বামী এই ঘটনা শুনে বাড়ি থেকে কোথায় চলে গেছে খোঁজ খবর পাইতেছি না। স্বামী জীবিত আছে কি না তাও জানি না। আমার ডিপটিউবওয়েল এবং পুকুরের ঘাটলা ব্যবহার করে আমার ঘরে খেয়ে পড়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে।
স্থানীয় জামায়াত নেতা মোঃ ইব্রাহিম হোসেন বলেন, অভিযুক্ত নাছির শেখ জামায়াতের নেতা নন, তিনি জামায়াতের একজন সহকারী সদস্য।
মেহেন্দিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই রেদোয়ান হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে র্যাবের সহযোগিতায় জিনাইদাহ হইতে ৩তারিখ রাতে গ্রেফতার করে। জিনাইদাহ সদর থানা হইতে। আত্নগোপনে ছিলো ২১দিন ছিলেন।
Leave a Reply