
এস এল টি তুহিন : কীর্তনখোলা নদীর অব্যাহত ভাঙনে হুমকির মুখে পরেছে সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়াডের পৃর্ব চরআবদানীর ১৩১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদসহ গ্রামবাসীর ফসলি জমি। সরেজমিনে দেখা যায়, পৃর্ব চরআবদানীর এলাকার ১৩১ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যাতায়াত ও গ্রামবাসীর চলাচলের সড়কটির তিন কিলোমিটার এবং শতাধিক পরিবারের বসত ঘর ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চরআবদানীর গ্রামের বৃহৎ এলাকা নদী গ্রাস করে নিলেও বাকি অংশটুকু ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। জরুরিভাবে নদী ভাঙন রোধ করা না গেলে চরআবদানী গ্রামটি শুধু কাগজে-কলমে ইতিহাস হয়ে থাকবে। চরআবদানী গ্রামের কৃষক মো. জালাল হাং বলেন, আমি এই গ্রামে জন্ম নেয়ার পর থেকেই দেখতেছি কীর্তনখোলা নদী ভাঙ্গলে দৃশ্য। আমার আপন ভাইসহ পরিচিত অনেক মানুষের ঘর ও ফসলি জমি হারিয়ে গেছে নদীর ভাঙ্গলে। প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস ছিল এই গ্রামের আয়চায় কেন্দ্র নিয়ে। কালের বিবর্তনে আর নদী ভাঙ্গলের কারণে হারিয়ে যায় ঘর-বাড়ি আর ফসলি জমি। বিভিন্ন জায়গায় চলে যায় গ্রামের অনেক পরিবার। যেহেতু আমি এই গ্রামের ছেলে, গ্রামের ভালবাসার টানে কোথাও যেতে পারি না। ভাঙণের সময় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘর উঠিয়ে কোনো রকমে থাকার জায়গা করতে হয়। আমার ঘর ও প্রায় পাঁচ একরের বেশি ফসিল জমি এখন নদীতে চলে গেছে, সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব আমি। চরআবদানীর গ্রামের অন্যতম সমাজসেবক নুরুল ইসলাম বলেন, এখন কীর্তনখোলার অব্যাহত ভাঙনে ইতোমধ্যে চরবাড়িয়া ও চরআবদানীর এলাকা সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে কীর্তনখোলার ভাঙনের কবলে রয়েছে ১৩১ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে বিদ্যালয়ের পাশে থাকা আয়নার প্যাদা জামে মসজিদসহ অসংখ্য স্থাপনা ও গ্রামবাসীর ফসলি জমি। কীর্তনখোলার ভাঙন থেকে জরুরি ভিত্তিতে সরকারি-বেসরকারি এসব স্থাপনা ও গ্রামবাসীর ফসলি জমি রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী এবং পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি। জানা যায়, ইতোমধ্যে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেতে চরবাড়িয়া ও চরআবদানীর গ্রামবাসী কীর্তনখোলা নদীর তীরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। নিঃস্ব ও অসহায় গ্রামবাসী স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন থেকে চরবাড়িয়া ও চরআবদানী গ্রামসহ ১৩১ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ১৩১ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হারুন আর রশিদ বলেন, এতোদিন স্কুলসহ স্কুলে আসার যাতায়াতের পথ পানিতে ভুবে থাকতো। শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে নানান সম্যসায় পড়তে হতো। এই সম্যসা সমাধানের জন্য রাস্তা তৈরি হল। তবে দুঃখের বিষয় যে আমাদের স্কুলটিই কীর্তনখোলা নদীতে বিলীনের পথে। এখান থেকে অন্য জায়গায় স্কুলটি স্থানান্তর করলে এই গ্রামের অনেক ছেলে-মেয়েদের অন্য গ্রামের গিয়ে শিক্ষা অর্জন করতে হবে। তাতে হুমকির মুখে পড়বে চরআবদানীর গ্রামের অনেক শিক্ষার্থী। বরিশাল সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, আমার চেষ্টা করতেছি ওই স্কুলটি ওই গ্রামেরই মধ্যে অন্য কোনো ভালো জায়গায় করার জন্য। এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাহতাব হোসেন সুরুজ বলেন, ভাঙন দেখা দেয়ায় ১৩১ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ঘর বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় সাংসদ ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামীম ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি (প্রতিমন্ত্রী) নদী ভাঙন প্রতিরোধে নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস দেন।
Leave a Reply