মেহেন্দিগঞ্জে হাসপাতালে ঢুকে ৪ ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়েছে প্রতিপক্ষরা
-
আপডেট সময় :
রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২২
-
৯০
০ বার সংবাদটি পড়া হয়েছে
অনলাইন ডেস্ক //
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের বিরোধে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকে প্রতিপক্ষ গ্রুপের ৪ জনকে কোপানো হয়েছে। রোববার দুপুর ২টায় এই ঘটনার আগে হামলায় আহত ছাত্রলীগকর্মী রিমনকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দিতে হাসপতালে নিয়ে গিয়েছিল হামলার শিকার ৪ জন।
এ খবর পেয়ে রিমনকে নির্যাতনকারীরা ধারালো অস্ত্রসহ নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে হামলা চালায়। তারা ৪ জনকে কুপিয়ে জখম ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগ তছনছ করেছে।
মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন খান সমকালকে জানান, হাসপাতালে হামলাকারীরা স্থানীয় সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথের সমর্থক। পৌর কাউন্সিলর সোহেল মোল্লা হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন।
কামাল উদ্দিন খান জানান, হামলাকারীরা এমপি পংকজ বিরোধী ৪ ছাত্রলীগ কর্মীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়েছেন। গুরুতর আহত জেহাদ (১৯), আবদুল্লাহ (২২), নোমান সরকার (২১) রিমনকে (২৩) উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাছাড়া যুবলীগ নেতা এ এস মামুনকে মেহেন্দিগঞ্জ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
হামলার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মেহেন্দিগঞ্জের এক সংবাদকর্মী সমকালকে বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফ্লোর ও দেয়াল রক্তে সয়লাব হয়ে গেছে। নেবুলাইজার মেশিন ও ফ্যানসহ অন্যান্য আসবাবপত্র তছনছ করেছে হামলাকারীরা। তাদের তাণ্ডব দেখে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত উপসহকারী মেডিকেল অফিসার শাকিলা ইসরাত অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ওই সংবাদকর্মী জানিয়েছেন, কাউন্সিলর সোহেল মোল্লার নেতৃত্বে ১৫-২০ জন হামলাকারী প্রত্যেকের হাতে ছিল ধারালো অস্ত্র, রড ও লাঠিসোঁটা। তাদের ভয়ে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ও কর্মচারীরা পালিয়ে যান। এরপরে হামলাকারীরা দরজা আটকে চিকিৎসা নিতে আসা এমপি পংকজ বিরোধী আওয়ামী লীগ কর্মীদের কুপিয়েছে ও পিটিয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ আসার পর হামলকারীরা চলে যায়।
হাসপাতালে হামলার সূত্রপাত সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন খান বলেন, এমপি বিরোধী ছাত্রলীগ কর্মী রিমনকে ১২টার দিকে রাস্তা থেকে ধরে কাউন্সিলর সোহেল মোল্লার বাসায় নিয়ে নির্যাতন করা হয়। খবর পেয়ে তিনি (কামাল) থানায় ফোন পেয়ে রিমনকে উদ্ধার করতে পুলিশ পাঠাতে বলেন। পুলিশ পৌঁছানোর আগে আশপাশের নারীরা রিমনকে উদ্ধার করে। এমপি বিরোধী আরও কয়েক ছাত্রলীগ কর্মী খবর পেয়ে চিকিৎসার জন্য রিমনকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তারা হাসপাতালের পৌঁছার কিছুক্ষণ পরেই কাউন্সিলর সোহেল মোল্লার নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়।
অভিযোগের বিষয়ে সোহেল মোল্লা সমকালকে বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই তারা বিক্ষোভ করেন। গতকাল বিক্ষোভ শেষে খবর পান তার বাসার সামনে আওয়ামী লীগের ব্যানার ফেস্টুন ছাত্রদলের যুগ্ন আহ্বায়ক ইমরান খান ও তারিকের নেতৃত্বে ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। তার সমর্থকরা ছাত্রদল কর্মীদের ধাওয়া করেছে। এ সময় ছাত্রদল কর্মীরা তার বাড়ির মধ্যে ঢুকে ভাঙচুর করে হাসপাতালের ভেতরে চলে যায়। এতে ক্ষুদ্ধ তার (সোহেল) সমর্থকরা হাসপাতালে গেলে দুইপক্ষের মধ্যে সামান্য হাতাহাতি হয়।
ছাত্রলীগ কর্মী রিমন কীভাবে আহত হলো জানতে চাইলে সোহেল মোল্লা বলেন, হামলারকারী ছাত্রদল কর্মীরা তার বন্ধু। ঘটনার সময় সে তাদের সঙ্গে ছিল। তবে কীভাবে আহত হয়েছে এটা তার জানা নেই।
মেহেন্দিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, রোববার দুপুরে ছাত্রলীগকর্মী রিমনকে কাউন্সিলর সোহেল মোল্লার বাসায় আটকে নির্যাতন করা হয়। তাকে উদ্ধার করে অন্য ৪ ছাত্রলীগ কর্মী হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন সোহেল মোল্লার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী জরুরি বিভাগে ঢুকে ৪ জনকে কুপিয়েছে।
ওসি বলেন, জরুরি বিভাগে মেঝে ও দেয়ালের রক্ত দেখে বোঝা যাচ্ছে হামলা কতটা বিভৎস ছিল। হামলকারী সোহেল মোল্লা সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথের অনুসারী এবং হামলার শিকার আওয়ামী লীগ কর্মীরা এমপি-বিরোধী গ্রুপের।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাইয়েদ মো. আমরুল্লাহ বলেন, ঘটনার সময় তিনি হাসপাতালে ছিলেন না। প্রথমে শুনেছেন হাসপাতালের মধ্যে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে মারামারি হয়েছে। পরে জানতে পারেন দুইপক্ষই আওয়ামী লীগের।
প্রসঙ্গত, মেহেন্দিগঞ্জের সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথের পক্ষ ও বিপক্ষ গ্রুপ দীর্ঘদিন মুখোমুখি অবস্থানে আছেন। দুইপক্ষের বিরোধে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ জন নিহত ও অসংখ্য নেতাকর্মী পঙ্গু হযেছেন। প্রায় প্রতিদিনই হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটছে।
সূত্রঃ দৈনিক সমকাল
Like this:
Like Loading...
নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
Leave a Reply