করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার অন্যতম উপায় দেশের বেশির ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনা। এজন্য বাংলাদেশ সরকার ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে তিন কোটি ডোজের চুক্তি করে। কিন্তু সেই অনুযায়ী টিকা দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। ফলে এই টিকা নিয়ে এক রকম অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। যারা ইতোমধ্যে টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছে তাদের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আজ থেকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম ডোজ নেওয়ার পর যদি যথাসময়ে কেউ যদি দ্বিতীয় ডোজ নিতে না পারে তাহলে দিনে দিনে তার প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করবে। তবে একই কোম্পানির টিকা না হলেও একই ধরনের টিকা দ্বিতীয় ডোজ হিসাবে নেওয়া যাবে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে যারা প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে তাদের দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিতে চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনকি এক সপ্তাহের মধ্যে দেশীয় কোম্পানি গ্লোব বায়োটেকের টিকার হিউম্যান ট্রায়ালের অনুমোদন দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, মাত্র একটি সোর্সের ওপর নির্ভর করে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করার কারণেই সংকটের মুখে পড়েছে দেশের টিকাদান কার্যক্রম। কারণ যেসব টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রি-কোয়ালিফাইড নয়, সেগুলোর অনুমোদন দিচ্ছে না বাংলাদেশ। কিন্তু পৃথিবীর অনেক দেশেই রাশিয়ার টিকা স্পুটনিক-ভি ব্যবহার করা হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন ছাড়াই। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও এই টিকার অনুমোদন দিয়েছে। অন্যদিকে চীনে দুটি টিকার ‘ইমার্জেন্সি অথরাইজেশন’ দেওয়া হয়েছে। এমনকি করোনা মহামারি বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রচলিত নিয়ম ভেঙে করোনার টিকার অনুমোদন দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। এ ধরনের মহামারির ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থা বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
টিকার হিসাব : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে গণহারে করোনা টিকা দেওয়া শুরু হয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে। ওইদিন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে টিকা দিয়ে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এর আগে ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৫৮ লাখ ১৮ হাজার ৪০০ জনকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। গত ৮ এপ্রিল দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরুর পর এ পর্যন্ত ২৩ লাখ ২৬ হাজার ৮৬৬ জন এই টিকা নিয়েছেন। দেশে এ পর্যন্ত কেনা টিকা এসেছে ৭০ লাখ ডোজ এবং উপহার হিসাবে এসেছে আরও ৩২ লাখ। সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে ৮১ লাখ ৪৫ হাজার ২৬৬ ডোজ টিকা। বর্তমানে মজুদ আছে ২০ লাখ ৫৪ হাজার ৭৩৪ ডোজ টিকা।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন : টিকার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, যাদের প্রথম ডোজ নেওয়া আছে তাদের ১২ সপ্তাহ কোনো চিন্তা নেই। এই সময়ের জন্য তারা নিরাপদ। এরপর দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারলে কমপক্ষে ৬ মাস নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন। তিনি বলেন, দ্বিতীয় ডোজ হলো বুস্টার ডোজ। এটি কোশের (সেলের) স্মরণশক্তি বাড়ায় অর্থাৎ মেমোরি সেলে তথ্য সংরক্ষণ করে। যা এক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। যদিও বিষয়গুলো নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। তিনি বলেন, টিকা সংকটের কারণে যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন তারা যদি অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ না পায় তাহলে ফাইজারের টিকা দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দিতে পারবেন। এটা নিয়েও গবেষণা চলছে। তবে ভেক্টরবেজ টিকা এবং এমআরএনএ প্রযুক্তির টিকা একটির প্রথম ডোজ এবং অন্যটির দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যাবে। তবে প্রথম ডোজ নেওয়ার পর যদি যথাসময়ে কেউ যদি দ্বিতীয় ডোজ নিতে না পারে তাহলে দিনে দিনে তার প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করবে।
মহাপরিচালকের বক্তব্য : রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম যুগান্তরকে বলেন, দ্বিতীয় ডোজের কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হবে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে কিছু টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যারা প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন তাদের দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া চীনের কোম্পানি সিনোফার্ম ৫ লাখ টিকা উপহার হিসাবে দেবে। দেশের প্রয়োজনে সেগুলো জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। এছাড়া আগামী মাসে কোভ্যাক্স সুবিধা থেকে এক লাখ ডোজ টিকা আসবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। সেটি ফাইজার-বায়োএনটেক উদ্ভাবিত টিকা। রাশিয়ার সঙ্গে টিকা সংক্রান্ত কোনো চুক্তি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো চুক্তির বিষয়ে আমার জানা নেই।
প্রথম ডোজ বন্ধ : মজুত কমে আসায় এবং সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা না কাটায় সোমবার (আজ) থেকে করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমএনসিঅ্যান্ডএইচ শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জুনের আগে সেরামের টিকা নয় : ভারতে ক্রমেই কোভিড পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এর মধ্যে আগামী জুনের আগে সেরাম থেকে টিকা আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এমনকি ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সময় আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ঢাকা ও দিল্লি সংশ্লিষ্টরা। ভারতে বর্তমানে প্রতিদিন তিন লাখের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। অক্সিজেন সংকট রয়েছে এবং স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা নাজুক। এমন পর
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।Design & Development : It Corner BD.Com 01711073884.
Leave a Reply