ছয়শ কোটি টাকা কোষাগারে দিচ্ছে না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, এনসিটিবি পুরোটাই
-
আপডেট সময় :
বুধবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
-
২৬৮
০ বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক //
এনসিটিবি ২০০ কোটি টাকার পুরোটাই জমা দিলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলতি অর্থবছর ১ হাজার কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ৪০০ কোটি টাকা জমা দিয়েছে। বাকি ৬০০ কোটি না নেয়ার অনুরোধও জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, পাঁচ কিস্তিতে আমাদের মোট ১ হাজার কোটি টাকা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত দুই কিস্তিতে ৪০০ কোটি টাকা জমা দিয়েছি। করোনাকালে আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক প্রোগ্রাম নিয়েছি। ডিজিটাল স্টুডিও করা হচ্ছে। এসব কারণে ব্যয় বেড়েছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণের কাজ করতে হচ্ছে। তাই আমরা বাকি অর্থ না দেয়ার বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছি। এ বিষয়ে সরকারকে পুনর্বিবেচনা করতে বলেছি।
স্বশাসিত বিভিন্ন সংস্থার তহবিলের অলস অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা নিচ্ছে সরকার। ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে রাষ্ট্রীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য এ অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো এখন পর্যন্ত এ বাবদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে মোট অর্থ জমা দিয়েছে ২৩ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ ও পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ দেশের মোট ৬৮টি স্বশাসিত সংস্থার মোট ২ লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা অলস হিসেবে বিভিন্ন ব্যাংকে জমা পড়েছিল। সে সময় এ অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নিতে এক আইন প্রণয়ন করে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আইনটি প্রণয়নের পর গত অর্থবছরে (২০১৯-২০) আটটি সংস্থা থেকে মোট ১৬ হাজার ৪৬ কোটি টাকা পেয়েছিল সরকার। চলতি অর্থবছরেও সরকারের এ বাবদ কমপক্ষে ১৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা গ্রহণের লক্ষ্য রয়েছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা জমা পড়েছে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত স্বশাসিত সংস্থাগুলো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে উদ্বৃত্ত অর্থের ২৩ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর আগ পর্যন্ত অনেক সংস্থাই ব্যাংকে অলস টাকা ফেলে রেখেছিল। সুদ যোগ হয়ে এ টাকার পরিমাণ দিন দিন বেড়েছে। কোনো কোনো সংস্থা এ অর্থ থেকে কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত বোনাসও দিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী আইনটি খুবই সময়োচিত হয়েছে। স্বশাসিত সংস্থাগুলোর তহবিল থেকে আসা সাড়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা কভিড-১৯ সংক্রমণের দুঃসময়ে বেশ কাজে লেগেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে ১৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা সরকারের কোষাগারে জমা হয়েছে। অর্থবছরের বাকি সময়ে আরো আসবে। এছাড়া গত অর্থবছর আট সংস্থা থেকে ১৬ হাজার ৪৬ কোটি টাকা পেয়েছিল সরকার।
অর্থ বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ বাবদ ৩ হাজার কোটি টাকা নেয়ার লক্ষ্য ছিল। এ অনুযায়ী বন্দর কর্তৃপক্ষ পুরো টাকাই রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করে দিয়েছে। ২০০ কোটি টাকা লক্ষ্যের বিপরীতে পুরো টাকাই কোষাগারে জমা করে দিয়েছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষও।
রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোও (ইপিবি) সংস্থাটির ওপর নির্ধারিত ৩০০ কোটি টাকার পুরোটাই জমা করে দিয়েছে। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনও (বিএসটিআই) লক্ষ্যমাত্রার পুরোটা (১০০ কোটি টাকা) জমা দিয়েছে। একইভাবে নির্ধারিত ২০০ কোটি টাকার পুরোটাই জমা করে দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডও (এনসিটিবি)।
এছাড়া বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল সরকার। তবে সংস্থাটি এখন পর্যন্ত ২ হাজার কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে। বাকি টাকাও শিগগিরই জমা দেয়া হবে বলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, আমরা গত অর্থবছর ৪ হাজার কোটি টাকা জমা দিয়েছি। এ বছর এরই মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা জমা দেয়া হয়েছে। লক্ষ্য রয়েছে আরো ৩ হাজার কোটি টাকা দেয়ার। আমরা সেটা সময়মতো দিয়ে দেব।
অর্থ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মচারীরা বলছেন, সংস্থাগুলোর নিজেদেরই দায়িত্ব হচ্ছে উদ্বৃত্ত তহবিল রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়া। কিন্তু নানা অজুহাতে তারা তা করছিল না। সেজন্য অর্থ বিভাগ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে এ বিষয়ে আইনের খসড়া তৈরি করে মন্ত্রিসভায় পাঠায় এবং মন্ত্রিসভা তা অনুমোদন করে। এরপর ২০২০ সালের শুরুর দিকে জাতীয় সংসদে এ আইন পাস হয়।
অনুমোদনের পর ব্রিফিংয়ে তত্কালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছিলেন, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ দেশের মোট ৬৮টি স্বশাসিত সংস্থার ২ লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা ‘অলস’ হিসেবে বিভিন্ন ব্যাংকে জমা আছে। এ হিসাব ২০১৯ সালের ৩১ মে পর্যন্ত। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গিয়েছে, ঠিক এক বছর পর ২০২০ সালের ৩১ মে পর্যন্ত সংস্থাগুলোর জমা টাকার পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে জমার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
Like this:
Like Loading...
নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
Leave a Reply