চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭ দিনের কঠোর লকডাউন
-
আপডেট সময় :
মঙ্গলবার, ২৫ মে, ২০২১
-
২৫৭
০ বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্কঃ
রাজশাহী অঞ্চলে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে মহামারি করোনা। বিশেষ করে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অবস্থা খুবই নাজুক। এ দুই জেলায় গেল ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার ছিল যথাক্রমে ৪৪ ও ৫৫ শতাংশের বেশি। রোববার বিকাল থেকে সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই মারা গেছেন ১০ জন। তারা সবাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত বছর মার্চে করোনা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ওই হাসপাতালে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু এটি। মৃতদের মধ্যে বেশির ভাগই চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সোমবার রাত ১২টা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭ দিনের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।
এদিন দুপুরে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ তার কার্যালয়ে প্রেস বিফিংয়ে বলেন, সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী হার লক্ষ করা যাচ্ছে। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনাক্রমে জেলায় আজ (সোমবার) রাত ১২টা থেকে লকডাউন দেওয়া হয়েছে। জনগণকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ রাখতে সাত দিন এ লকডাউন কার্যকর করা হবে। লকডাউনের সময় সব দোকানপাট ও যান চলাচল বন্ধ থাকবে। রাজশাহী ও নওগাঁ থেকে কোনো যানবাহন চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবেশ করতে পারবে না, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকেও কোনো যানবাহন জেলার বাইরে যাবে না। রোগী ও অন্য জরুরি সেবাদানকারীর ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক নির্দেশনায় চাঁপাইয়ে সব ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধসহ ১০ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমাবেশ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। বাড়ির বাইরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া আমের হাটবাজারে লোক সমাগম সীমিত করতে বলা হয়েছে। আমের বাগান থেকে সরাসরি এবং অনলাইনে আম ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, পরিস্থিতি এতটা খারাপের পরও কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। আমরা রাজশাহীতেও লকডাউন দেওয়ার সুপারিশ করেছি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, মৃতদের মধ্যে আইসিইউতে ৪ জন, ১৬নং ওয়ার্ডে ৩ জন, ২৯নং ওয়ার্ডে ১ জন, ২২নং ওয়ার্ডে ২ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে ৫ জনই চাঁপাইনবাবগঞ্জের, ৪ জন রাজশাহীর এবং একজন পাবনা জেলার বাসিন্দা। তবে আক্রান্ত ও মৃতদের মধ্যে সীমান্তবর্তী শিবগঞ্জের লোক বেশি। সোমবার দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট ও আইসিইউতে ১৭৮ জন করোনা রোগী ভর্তি আছেন বলে জানিয়েছেন উপপরিচালক। ভর্তি হওয়া করোনা রোগীদের ৯৫ জনই চাঁপাইনবাবগঞ্জের। বাকিরা রাজশাহী মহানগরী ও গোদাগাড়ী উপজেলার। অব্যাহত করোনা রোগীর চাপে রামেক হাসপাতালের পরিস্থিতি নাজুক উল্লেখ করে উপপরিচালক ডা. সাইফুল যুগান্তরকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। করোনায় আক্রান্তদের হাসপাতালে জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে সংক্রমণ আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দুদিন পর থেকেই রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। সীমিত আকারে পরীক্ষার মধ্যেই এই দুই জেলায় দৈনিক গড়ে ১০০ জন আক্রান্ত হচ্ছেন। যাদের শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ শুধু তাদেরই হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। বাকিদের নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এদিকে করোনার চিকিৎসা পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে রাজশাহী সদর হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড স্থাপনের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা সম্প্রসারণের বিষয়ে আলোচনা হয়। সভা সূত্র জানায়, রামেক হাসপাতাল কমিটির সভাপতি রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা রামেক হাসপাতালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের করোনাক্রান্তদের রাজশাহীতে ভর্তি না করে বগুড়া বা বিকল্প কোথাও চিকিৎসার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেন। তবে এ প্রসঙ্গে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, সেটা সম্ভব নয়। রোগী যেখানকারই হোক চিকিৎসা পাওয়া মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। রোগী এলে তাকে চিকিৎসা দিতেই হবে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রোগীর চাপ বাড়ায় ইতোমধ্যে করোনা ওয়ার্ডের সংখ্যা আরও একটি বাড়িয়ে চারটি করা হয়েছে। অন্যদিকে আইসিইউতে শয্যা সংখ্যা বেড়ে এখন ১৫টি। সোমবার দুপুর পর্যন্ত কোনো আইসিইউ বেড খালি ছিল না। আইসিইউর জন্য রোগীর স্বজনরা হাহাকার করলেও খালি না থাকায় গুরুতর অনেক রোগীকে সাধারণ করোনা ওয়ার্ডে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। করোনা টিকার দুটি ডোজ গ্রহণের পরও অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ডাবলু টিকার দুটি ডোজই নিয়েছিলেন। নগরীতে আরও অন্তত তিনজন দুই ডোজ নেওয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
অভিযোগে জানা গেছে, করোনায় মৃতদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারি উদ্যোগে আগে যেভাবে দাফন কাফন করা হতো- এখন তা হচ্ছে না। যারা করোনায় মারা যাচ্ছেন হাসপাতাল থেকে তাদের লাশ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। মৃতদের নিজ নিজ গ্রামে বা বাড়িতে নিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে জানাজা শেষে দাফন করা হচ্ছে, যেখানে বিপুল মানুষের অংশগ্রহণও থাকছে। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের পক্ষে করোনায় মৃতদের লাশ দাফন করা সম্ভব না হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিবারকেই লাশ দিচ্ছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, করোনায় মৃতদের লাশ তিন ঘণ্টা পর আর বিপজ্জনক নয়। তাই পরিবারকেই লাশ দিয়
Like this:
Like Loading...
নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
Leave a Reply