গুলশানের ফ্ল্যাটে তরুণীর লাশ দেশজুড়ে চাঞ্চল্য
-
আপডেট সময় :
বুধবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২১
-
২৪০
০ বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

রাজধানীর গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাটে মোসারাত জাহান মুনিয়া (২১) নামের এক তরুণীর আত্মহত্যার ঘটনা দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এমনকি আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার অভিযোগ এনে একটি শিল্প গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।
মামলাটি করেছেন ঘটনার শিকার মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান। পুলিশ পুরো ঘটনা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। এটি আত্মহত্যা, নাকি তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে- সেটি বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশের গুলশান বিভাগ।
এজন্য ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া মুনিয়ার মোবাইল ফোন ও ডায়েরিসহ অন্যান্য ইলেকট্রিক ডিভাইস পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। ওই মোবাইল ফোনে আসামির সঙ্গে মুনিয়ার অনেক অন্তরঙ্গ ছবিও পাওয়া গেছে।
পাশাপাশি বিভিন্ন অ্যাপসে তাদের কথোপকথন ও মেসেজ আদান-প্রদানের তথ্য মিলেছে প্রাথমিক তদন্তে।
এদিকে আসামিকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। পুলিশের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে আসামির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করা হলে বিচারক শহিদুল ইসলাম তা মঞ্জুর করেন।
সোমবার রাত ১১টায় গুলশান-১-এর ১২০ নম্বর রোডের ১৯ নম্বর বাসার একটি ফ্ল্যাট (বি/৩) থেকে মুনিয়া নামের এক তরুণীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় লাশ বেডরুমের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিল। মুনিয়ার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম সফিকুর রহমান।
গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা সদর উপজেলার মনোহরপুর। সোমবার সকালে বড় বোন নুসরাত জাহানের সঙ্গে মুনিয়ার মুঠোফোনে শেষ কথা হয়। এ সময় মুনিয়া জানান, তাকে তার বয়ফ্রেন্ড বিয়ে করবে না এবং সে বিষয়টি নিয়ে খুব বিপদে আছে।
যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এরপর তার বোন ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। কিন্তু দুপুর ১২টা থেকে বিকালে ঢাকায় বোনের ফ্ল্যাটে পৌঁছা পর্যন্ত মুনিয়ার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পারেননি। ফোন সচল থাকলেও রিসিভ করেননি।
পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি সুদীপ কুমার চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে তরুণীর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। কোন পরিস্থিতির কারণে এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে সেটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। গুরুত্ব বিবেচনায় গুলশান থানার ওসিকে মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়েছে।
গুলশান বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এ মামলার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আসামিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি মোবাইল ফোনের কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁসের বিষয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে।
মামলার বাদী মুনিয়ার বোন নুসরাতের অভিযোগ, তার বোনকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আসামি। যিনি ফ্ল্যাটে স্বামীর পরিচয়ে আসা-যাওয়া করতেন। কিন্তু সম্পর্কের বিষয়টি আসামির পরিবার জেনে যাওয়ায় মুনিয়ার জীবন হুমকির মুখে পড়ে।
আসামির মা তার বোনকে (মুনিয়া) একবার ডেকে নিয়ে হুমকিও দিয়েছিলেন। এ কারণে বিয়ে করে তার বোনকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আসামি। কিন্তু তার উদ্দেশ্য ভালো ছিল না।
বাস্তবে মুনিয়ার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক চালিয়ে গেলেও বিয়ের কোনো ইচ্ছে ছিল না তার। একপর্যায়ে ঘটনার দিন সকালে মুনিয়াকে বিয়ে করবে না জানিয়ে আসামি হুমকিও দিয়েছিলেন।
এজাহারের এক স্থানে বাদী উল্লেখ করেন, ‘আমার বোনের মাধ্যমে জানতে পারি, আসামি তাকে বিয়ে করে দেশের বাইরে সেটেল করবে বলে জানিয়েছিল। কারণ, দেশে যদি আসামির বাবা-মা এ সম্পর্কের কথা জানতে পারে তাহলে মুনিয়াকে মেরে ফেলেবে।’
মামলার বিবরণে আরও বলা হয়েছে, তার বোন (মুনিয়া) মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি শিক্ষার্থী। তাদের বাবা-মা বেঁচে নেই। ২ বছর আগে আসামির সঙ্গে তার বোনের পরিচয় হয়।
পরিচয়ের পর থেকেই বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে তারা দেখা করতেন এবং মোবাইল ফোনে কথা বলতেন। একপর্যায়ে আসামির সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ২০১৯ সালে আসামি তার বোনকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আসামির পরিবার বিষয়টি জানতে পারে। পিয়াসা নামের এক নারীর মাধ্যমে আসামির মা মুনিয়াকে ডেকে নিয়ে ভয়ভীতি দেখান এবং ঢাকা থেকে চলে যেতে বলেন।
এ ঘটনার পর আসামি মুনিয়াকে পরে বিয়ে করবেন জানিয়ে কৌশলে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন। ১ মার্চ মুনিয়াকে আবারও ঢাকায় বাসা ভাড়া নিতে প্ররোচিত করেন। আসামি তাকে বলেন, বড় বোন নুসরাত এবং তার স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে বাসা ভাড়া নিতে।
তারপর গুলশান-১-এর ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার বি/৩ ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন আসামি। ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে আসামির সঙ্গে মুনিয়ার ছবি এমনভাবে বাঁধিয়ে রাখা হয়, যাতে যে কেউ দেখে মনে করেন তারা স্বামী-স্ত্রী। আসামি আসলে ওই কক্ষটিতে থাকতেন।
মামলার এজাহারে বাদী নুসরাত বলেন, শুক্রবার মুনিয়া ফোন করে জানায়, আসামি তাকে বকা দিয়েছে। কারণ জানতে চাইলে তার বোন জানায়, তিনি (মুনিয়া) ফ্ল্যাট মালিকের বাসায় গিয়ে ইফতার করেন এবং ছবি তোলেন।
সেই ছবি ফ্ল্যাট মালিকের স্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট করেন। এটি পিয়াসা নামের এক নারী দেখতে পেয়েছেন। পিয়াসা ফ্ল্যাট মালিকের স্ত্রীর ফেসবুক ফ্রেন্ড এবং পরিচিত। এ কারণে আসামি মুনিয়াকে বলেন, পিয়াসা মাকে (আসামির মা) সব জানিয়ে দেবে।
এ সময় আসামি বলেন, ‘তোমার (মুনিয়া) আর এখানে থাকার দরকার নেই। তুমি কুমিল্লায় চলে যাও। আমি দুবাই চলে যাচ্ছি। কারণ, আম্মা জানতে পারলে তোমাকে মেরে ফেলবে।’ ওই ঘটনার ৩ দিন পর সোমবার সকাল ৯টার দিকে মুনিয়া ফোন করে কান্নাকাটি শুরু করে। তখন সে জানায়, আসামি তাকে বিয়ে করবে না। আসামি মুনিয়াকে জাস্ট ভোগ করেছে। আসামি তাকে আরও বলেছে, ‘তুই আমার শত্রুর সঙ্গে মিলিত হইছিস। মনে রাখিস, তোকে আমি ছাড়ব না।’ এ সময় মুনি
Like this:
Like Loading...
নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
Leave a Reply