রাজনৈতিক এজেন্ডা আদায়ের প্ল্যাটফরম হেফাজত : ডিবি
-
আপডেট সময় :
রবিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২১
-
২৮৩
০ বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক//
হেফাজতে ইসলামকে ‘অরাজনৈতিক সংগঠন’ বলা হলেও এর সব নেতা কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা। তাদের প্রত্যেকেরই আবার রাজনৈতিক এজেন্ডা আছে। হেফাজতের মাধ্যমে তারা দলীয় এজেন্ডা আদায়ের চেষ্টা করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর ঘিরে নাশকতার ছকে হেফাজত নেতারা সরকার পতনের কৌশল নিয়েছিলেন। হেফাজত নেতাদের গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে শনিবার নিজ কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম-কমিশনার মাহবুব আলম এসব কথা বলেন। এদিকে, শনিবার হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আহমেদ আব্দুল কাদেরকে ঢাকায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
হেফাজত নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিবির যুগ্ম-কমিশনার মাহবুব আলম সাংবাদিকদের বলেন, হেফাজতে ইসলাম এমন একটি সংগঠন যার নেতারা সব মাদ্রাসার ছাত্রকে ডাকতে পারেন এবং তাদের ডাকে সাড়াও দেয়। এ সুযোগ নিয়ে হেফাজতকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর ও আশপাশের এলাকায় সহিংসতার ঘটনায় হেফাজতের বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। একই ঘটনায় সম্প্রতি মুফতি ফখরুল জবানবন্দি দিয়েছেন। দুজনের জবানবন্দিতে একই ধরনের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। সেখানে কিছু বিষয়ও পরিষ্কার হয়েছে। এখন আর হেফাজতের অরাজনৈতিক চরিত্র নেই। অনেকের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অপচেষ্টা ও নাশকতা করছেন হেফাজত নেতারা। তাদের নেতাদের পরিকল্পনার বিষয়ে ডিবির যুগ্ম-কমিশনার মাহবুব আলম আরও বলেন, মূলত ২০১৩ সালে সরকার পতনের লক্ষ্যে একটি চক্রান্ত হয়েছিল। সেই চক্রান্তে জড়িত ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। নাশকতার উদ্দেশ্য
ছিল সরকার পতনের। সেখানে হেফাজতকে কাজে লাগিয়ে সরকার পতনের অপচেষ্টা করা হয়েছিল। সরকার পতনের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে হেফাজত নেতারা দেশকে পাকিস্তান বা আফগানিস্তান মডেলে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছিলেন। হেফাজতের অনেক নেতা উগ্রবাদকে সমর্থন করেন। তদন্তে আমরা উগ্রবাদী নেতাদের নাম জানার চেষ্টা করছি। যারা নাশকতার চেষ্টা করছেন তাদের ভিডিও ফুটেজ, অডিও ও জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যগুলো সমন্বয় করা হচ্ছে।
মাহবুব আলম বলেন, এতিম ও অসহায় মাদ্রাসাছাত্রদের দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থসম্পদ, বাড়ি-গাড়ি করেছেন অনেক হেফাজত নেতা। মাদ্রাসা দখলের মতো অপকর্মেও তাদের অনেকে জড়িত। কেউ কেউ নারী কেলেঙ্কারির মতো ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, নাশকতার অভিযোগে ঢাকাসহ সারা দেশে বেশকিছু মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১২টি মামলা হয়েছে। এছাড়া ২০১৩ সালে হেফাজতের শাপলা চত্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় ৭৩টি মামলা হয়েছে। ৬৪টি মামলা তদন্তাধীন। এ পর্যন্ত হেফাজতের ১৫ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
হেফাজতের নায়েবে আমির কাদের গ্রেফতার : শিবিরের সাবেক সভাপতি ও হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ড. আহমেদ আব্দুল কাদেরকে ঢাকায় গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের সদস্যরা শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে আগারগাঁও থেকে তাকে গ্রেফতার করেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার এডিসি ইফতেখায়রুল ইসলাম জানান, কাদেরকে নিয়ে হেফাজতের ১৫ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
ওয়াজ-মাহফিল নিয়ন্ত্রণ : ডিবি কর্মকর্তারা জানান, সারা দেশে ওয়াজ-মাহফিল নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘রাবেতাতুল ওয়ায়েজিন’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করেছে হেফাজতে ইসলাম। এটি নিয়ন্ত্রণ করছে নিজেদের নেতাকর্মীদের নিয়ে গড়া সিন্ডিকেট। ওয়াজ-মাহফিলের মাধ্যমে উগ্রবাদী চিন্তাধারা ও বক্তব্য প্রচার এবং বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে।
চুক্তিতে বিয়ে মামুনুলের : হেফাজতের যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের গোপন বিয়ের বিষয়ে মাহবুব আলম বলেন, প্রথম বিয়ে শরিয়তসম্মতভাবে হয়েছে। তবে পরবর্তী দুটি বিয়ে ছিল চুক্তিভিত্তিক। কাবিননামা ছাড়া পরের দুই বিয়েতে স্ত্রী থাকবে তবে মর্যাদা পাবে না। আবার স্ত্রীর মতো মেলামেশা করতে পারবে, এমন চুক্তিও হয়। চুক্তিতে সম্পর্কের অধিকার ও সন্তান ধারণ করতে পারবেন না স্ত্রী- এমন শর্তও আছে। এটি প্রচলিত আইনের পরিপন্থি।
কিশোরগঞ্জে জামায়াত নেতা গ্রেফতার : কিশোরগঞ্জ ব্যুরো জানায়, হরতালের নামে নাশকতা ও তাণ্ডবের ঘটনায় ছাত্রলীগের করা মামলায় কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি নুরুদ্দিন নুরুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার ভোরে সদর উপজেলার মহিনন্দ গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরও সাতজন গ্রেফতার : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের বিক্ষোভ চলাকালে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরও সাতজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। শনিবার পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখে অভিযুক্তদের আরও সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ফরিদপুরে আবুল হুসাইন রিমান্ডে : ফরিদপুর ব্যুরো জানায়, ভাঙ্গা থানায় হামলার মামলায় হেফাজত নেতা আবুল হুসাইনের (৬৪) ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শুক্রবার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবুল হুসাইনকে ফরিদপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। শুক্রবার ভোরে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
Like this:
Like Loading...
নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
Leave a Reply