প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ৮, ২০২৫, ৭:১৮ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ এপ্রিল ২০, ২০২১, ৯:০৫ এ.এম
হেফাজতের উসকানিদাতাদের তালিকা ধরে অভিযান

সরকারবিরোধী হেফাজত নেতা, যারা দেশে সহিংস ঘটনার উসকানি দিচ্ছেন-তাদের তালিকা ধরে গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, দেশকে অস্থিতিশীল করতে সরকারবিরোধী একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের অর্ধশত নেতার সখ্যের প্রমাণ পাওয়া গেছে। দেশব্যাপী বিভিন্ন সহিংসতার হোতা তারাই। তাদের তালিকা ধরে গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে। হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মামুনুল হকসহ গ্রেফতার কেন্দ্রীয় নেতাদের মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মোহাম্মদপুর থানার করা মামলায় মামুনুলকে সাতদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
এদিকে হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ কয়েকজন নেতা সোমবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর থেকে শুরু করে সম্প্রতি দেশব্যাপী সহিংসতায় হেফাজত নেতারা জড়িত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনায় কয়েকজন নেতার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। দেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় জড়িতদের সম্পর্কে হেফাজতের গ্রেফতার সাত শীর্ষ নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। এ কারণে মামুনুলসহ অন্যদের মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিবি) দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি দেশব্যাপী যে নজিরবিহীন সহিংসতা হয়েছে এর পেছনে বিএনপি এবং জামায়াতঘেঁষা হেফাজত নেতারা ইন্ধন দিয়েছেন। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে সহিংসতার ঘটনায় করা মামলায় তাদের কয়েকজনের নাম রয়েছে। এতদিন ছাড় দেওয়ায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক সংগঠন না হলেও অনেক নেতা সরকারবিরোধী। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সহিংসতায় ইন্ধন দিচ্ছেন তারা। গ্রেফতার শীর্ষ নেতারা জিজ্ঞাসাবাদে এসব বিষয় স্বীকারও করেছেন।
সিআইডি সূত্র জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও মুন্সীগঞ্জ এবং নারায়ণগঞ্জে মাওলানা মামুনুল হক ইস্যুতে সহিংসতার ঘটনায় করা ২৩টি মামলার তদন্তভার পেয়েছে সিআইডি। এর মধ্যে কয়েকটি মামলার আসামি মামুনুল। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মাহবুব আলম যুগান্তরকে বলেন, শাপলা চত্বরে সহিংসতার ঘটনাসহ মাওলানা মামুনুলের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কোন কোন মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো যায় তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া হেফাজত নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এখন মামুনুলের সঙ্গে তাদের মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে যাদের নাম আসবে তাদের গ্রেফতার করা হবে। উগ্রবাদী মতবাদের সঙ্গে যারা জড়িত এবং নাশকতার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার করা হবে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মামুনুলের বিরুদ্ধে সারা দেশে ২৩টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে সহিংসতার ঘটনায় ঢাকার বিভিন্ন থানায় ১৫টি মামলার আসামি তিনি। ১৫টি মামলার মধ্যে মতিঝিল বিভাগে ১৩টি এবং লালবাগ বিভাগে দুটি মামলা রয়েছে। ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে সহিংসতার ঘটনায় ৫ এপ্রিল করা মামলায় তাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। মাওলানা মামুনুল হকসহ হেফাজতের আট শীর্ষ নেতা সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যরা হলেন-মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমদ, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম, মুফতি শরীফ উল্লাহ, মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন ও মুফতি ইলিয়াস।
হেফাজতের ২৩ মামলা সিআইডিতে : সিআইডি সূত্র জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও মুন্সীগঞ্জ এবং নারায়ণগঞ্জে রিসোর্টকাণ্ডে সহিংসতার ঘটনায় করা ২৩টি মামলার তদন্তভার পেয়েছে সিআইডি। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ১৫টি, চট্টগ্রামের দুটি, নারায়ণগঞ্জের একটি, কিশোরগঞ্জে দুটি এবং মুন্সীগঞ্জ জেলার দুটি মামলা রয়েছে। সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিসানুল হক যুগান্তরকে বলেন, মামলাগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। জানা গেছে, সহিংসতার ঘটনায় সারা দেশে ৭৭টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় চার শতাধিক আসামি গ্রেফতার হয়েছে।
তৃতীয় স্ত্রীর বিষয়ে মামুনুলের স্বীকারোক্তি : পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রিসোর্টকাণ্ডে মাওলানা মামুনুল হক দাবি করেছিলেন সঙ্গে থাকা নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। এ ঘটনার পর মোহাম্মদপুর থানায় এক নারীর ভাই জিডি করে দাবি করেন-তার বোনও মাওলানা মামুনুলের স্ত্রী। মামুনুলকে গ্রেফতারের পর এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি জানান, ওই নারী তার তৃতীয় স্ত্রী। এক বছর ধরে ওই নারী তার তত্ত্বাবধানে আছেন। তবে বিয়ের কোনো কাবিননামা নেই বলে জানান মামুনুল।
কোনঠাসা হেফাজত নেতাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক : হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ কয়েকজন নেতা সোমবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রাত ১০টার দিকে হেফাজতের নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসায় যান। এর আগে সোমবার দুপুরে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গেও হেফাজতে ইসলামের নেতারা বৈঠক করেছেন। একের পর এক শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতারের ঘটনায় অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে পড়েছে হেফাজতে ইসলাম। মূলত গ্রেফতার এড়াতে সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে চায় সংগঠনটি। এরই অংশ হিসাবে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে দলটির নায়েবে আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজী, হেফাজতের মহাসচিব নূরুল ইসলাম
প্রকাশক ও সম্পাদক : ফয়সাল হাওলাদার।
Copyright © 2025 মেহেন্দিগঞ্জ টাইমস ।। Mehendiganj Times. All rights reserved.