ফুড অ্যান্ড বেভারেজের কারখানায় আগুনে স্বজন হারানোর বেদনায় নারীর কান্না –
-
আপডেট সময় :
শনিবার, ১০ জুলাই, ২০২১
-
২২৯
০ বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্কঃ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকার হাসেম ফুড লিমিটেডের ছয়তলা ভবনে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে লাশ হয়েছে ৫২ তাজা প্রাণ। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ২৫ জনকে। বৃহস্পতিবার বিকালে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ভবনটিতে প্রচুর দাহ্য পদার্থের উপস্থিতিতে নেভানোর পরও ফের জ্বলে উঠছিল আগুন।
এতে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২২ ঘণ্টা পর শুক্রবার সন্ধ্যায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিন রাত পৌনে ১২টায় উদ্ধার কাজ স্থগিত করা হয়। প্রয়োজনে আজ ফের উদ্ধার কাজ পরিচালনা করা হবে। এ ঘটনায় বেশ কিছু শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন বলে স্বজনদের দাবি।
আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সব। কারখানার ভেতর থেকে একের পর এক বের করে আনা হয় আগুনে পুড়ে অঙ্গার হওয়া লাশ। সেখানকার বাতাসে ভাসতে থাকে পোড়া লাশের উৎকট গন্ধ। ভবনের কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ থাকায় বাড়ে হতাহতের সংখ্যা। অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশগুলো নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে।
আহত, নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তির স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে কারখানা ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিক ও স্বজনদের একটি অংশ আগুন নেভানোয় দেরির অভিযোগ এনে ভাঙচুর করেন কারখানাটির পাশের একটি ভবন ও কয়েকটি গাড়ি। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
এ সময় আনসার সদস্যদের শটগান ছিনিয়ে নিয়ে পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলে দেন তারা। এদিকে ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়ার কারণে অন্য লাশগুলো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
লাশ শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাত দেড়টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৪৮টি মৃতদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন ও ডিএনএ প্রোফাইল করতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া লাশের দাবিদার ২৬ স্বজনেরও নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলে ও দুর্ঘনাস্থলে যেসব স্বজন প্রিয়জনের খোঁজে এসেছিলেন, তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শ্রমিকদের বড় একটি অংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে। লাশগুলো এমনভাবে পুড়েছে যে, চেহারা চেনার সুযোগ নেই। তবে সংশ্লিষ্টদের ধারণা, নিহতদের অধিকাংশই শিশু-কিশোর।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান এবং দায়ীদের খুঁজে বের করতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস এবং কলকারখানা প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ এখনো নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ-কারখানা কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কর্মক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা এবং দায়িত্বশীলদের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই এত প্রাণহানি। এদিকে অগ্নিকাণ্ডের পর শুক্রবার সকালে ভবনটিতে ফাটল দেখা দেয়। এতে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেন-স্বপ্না আক্তার (৪৫), মীনা আক্তার (৪১) ও মোরসালিন (২৮)। ফায়ার সার্ভিস জানায়, বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা ৪২ মিনিটে সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের কর্র্মীরা ঘটনাস্থলে আসেন। ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করে র্যাব, পুলিশ, জেলা প্রশাসন, আনসার এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা। ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেন সিআইডি ক্রাইম সিনের সদস্যরা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য গাজী গোলাম দস্তগীর, র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান, কলকারখানা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক নাসির উদ্দিন আহম্মেদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলম ও রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ নুসরাত জাহানসহ বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ, শ্রমিক এবং স্থানীয়দের একাধিকবার সংঘর্ষ, ধাওয়া-পালটাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় বিক্ষোভকারীরা। তারা কারখানার গেটসংলগ্ন আনসার ক্যাম্প থেকে চারটি শটগান ছিনিয়ে নেয়। সেগুলো পাশের খালে ফেলে চলে যায়। তিনটি শটগান পানি থেকে উদ্ধার করা হলেও একটি এখনো উদ্ধার হয়নি। এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহের সময় শ্রমিকদের হামলার শিকার হন কয়েকজন সংবাদকর্মী। অনেক শ্রমিকের সন্ধান মিলছে না বলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে (কারখানার মেইন গেটের বাইরে) শ্রমিকরা এক ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালায়। এ সময় সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে হেলমেট ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনরা ফ্যাক্টরির সামনে এসে ভিড় জমান আপনজনের খোঁজে। স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অগ্নিকাণ্ডের সময় ছয়তলা ভবনটির মধ্যে চারতলার শ্রমিকরা কেউ বের হতে পারেননি। সিকিউরিটি ইনচার্জ চারতলার কলাপসিবল গেটটি বন্ধ করে রাখায় কোনো শ্রমিকই বের হতে পারেননি। প্রতিদিন চারতলায় ৭০-৮০ জন শ্রমিক কাজ করতেন। চতুর্থতলার শ্রমিকদের ইনচার্জ মাহবুব, সুফিয়া, তাকিয়া, আমেনা, রাহিমা, রিপন, কম্পা রানী, নাজমুল, মাহমুদ, ওমরিতা, তাছলিমাসহ প্রায় ৭০-৮০ জন
Like this:
Like Loading...
নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
Leave a Reply